Saturday 12 November 2016

মহাত্মা অঘোরী বাবা 2

একদিন ঘুরতে ঘুরতে বিন্ধ্যাচলে এলেন। এই বিন্ধ্যাচলে বিন্ধ্যবাসিনী দেবীর মন্দিরের অদূরে তিনি মহাসাধিকা মহেশ্বরী মায়ের সাক্ষাৎ লাভ করলেন। মাহেশ্বরীমা সবিস্ময়ে দেখলেন এক দিব্যোন্মাদ গৌরবর্ণ তেজোদৃপ্ত যুবক কুকুরদের সাথে একত্রে ফেলে দেওয়া এঁঠো পাতা থেকে ভাত খাচ্ছে। সত্য দৃষ্টি সম্পন্না মাহেশ্বরীমা এই যুবকের মধ্যে অধ্যাত্ম অগ্নির প্রজ্জলিত শিখা দেখতে পেলেন। তিনি ৩৬বছরের যুবক অমলেন্দুকে নিয়ে এলেন বক্রেশ্বরে। মাহেশ্বরীমা এর গুরুভাই মহাপুরুষ অঘোরীবাবা বক্রেশ্বর মহাশ্মশানে রয়েছেন। মাহেশ্বরী মা অঘোরীবাবার হাতে সত্যসন্ধানী অমলেন্দু গোস্বামীকে সমর্পন করলেন।

তিনি অমলেন্দুকে বললেন "এখানে থাক মন তোর হবে ", এই কথাটি উভয় অর্থেই অপূর্ব। মনকে করায়ত্ব করাই হল সাধনার উদেশ্য। তাই মনতোর অর্থাৎ মন্ত্র হওয়া প্রয়োজন। এই মন্ত্র লাভ হলো যথা সময়ে অমলেন্দুর। তিন বছর অঘোরীবাবা প্রদর্শিত সাধন পথে সাধনা করে অমলেন্দু গোস্বামী সিদ্ধিলাভ করলেন। দেবী ছিন্নমস্তার দর্শন ও বর লাভ করলেন।
অঘোরীবাবাকে তাঁর গুরু দুটি নির্দেশ দিয়েছিলেন - প্রথমতঃ ভারতের সকল তীর্থ পদব্রজে পরিভ্রমণ করতে হবে , দ্বিতীয়ত প্রতি বছর তিনি যেখানেই থাকুন একবার করে দেবী ছিন্নমস্তার পুজো করতে হবে। গুরুর এই নির্দেশ অঘোরীবাবা যথাযথ পালন করেন।
পরিব্রাজনার ক্ষেত্রে তিনি এক দুর্জয় সংকল্প গ্রহণ করেন , পদব্রজে তিব্বতের কৈলাশ থেকে ভারতের কন্যাকুমারী পর্যন্ত দ্বাদশ বার পরিক্রমা করেন। এই অমানুষিক , অস্বাভাবিক ও অপরিসীম প্রাণান্তকর পরিব্রাজনার সংকল্প ভারতের অন্য কোনো মহাপুরুষ গ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায় না।
যোগ ও তন্ত্র সিদ্ধ অঘোরীবাবার অলৌকিক যোগবিভূতি ছিল অবিস্মরণীয়। ভক্তের কল্যানে তিনি তা অকাতরে ব্যয় করতেন। প্রত্যেক বছর অগ্রহায়ণ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে তিনি তাঁর ইষ্ট দেবী মা ছিন্নমস্তার মহাপূজা করতেন। বাংলা ১৩৮০ সনে একশো এক বছর বয়সে নদীয়া জেলার কল্যাণীতে অঘোরীবাবা বিরাট সমারহে হাজারহাজার ভক্ত নরনারীর সামনে মা ছিন্নমস্তার পুজো করলেন। বিচিত্র ভয়ঙ্কর সুন্দর এই পুজো। পুজার পূর্বাহ্নে শতাধিক বছর বয়স্ক অঘোরীবাবা এক গ্লাস পাঁঠার রক্ত ও এক খন্ড নরমাংস খেয়ে দেবীর পূজা শুরু করলেন। পূজা শেষে অন্নপ্রসাদ সবাই গ্রহণ করলেন , একটি পাঁঠা বলি দিয়ে তার মাংস রান্না করে হাজারহাজার মানুষকে পেটভরে খাওয়ালেন।
অঘোরীবাবার দৈনন্দিন জীবন ও বিস্ময়কর , সিদ্ধি লাভের পর থেকে অর্থাৎ ১৩১৮ থেকে ১৩৮০ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৬২বছর ধরে তিনি স্নান করেননি কখনো অথচ তাঁর শরীর চন্দনের সুগন্ধে পরিপূর্ণ থাকতো। অঘোরীবাবার প্রতিদিনের আহার হলো ১০/১২ বোতল বিলাতি মদ (জল ছাড়া) , ১০ প্যাকেট চারমিনার সিগারেট ও একটি ফল। অঘোরীবাবা সকল চিকিৎসা অগ্রাহ্য করে প্রতিদিন তা পান করে গেছেন , একইসঙ্গে তিনি অস্নাত এবং অভুক্ত ও থেকেছেন।
১৯৭৬ সালে এই সর্বত্যাগী মহাপুরুষ অঘোরীবাবা , মহাপীঠ তারাপীঠ (৫খন্ড) গ্রন্থের লেখক মাতৃসাধক শ্রী বিপুল কুমার গঙ্গোপাধ্যায় এর গৃহে পদার্পন করে তারাপীঠ ও শ্রীশ্রী বামাক্ষ্যাপা প্রসঙ্গে অনেক নিগূঢ় কথা বলেন। উক্ত কাহিনী ১৯৭৪ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে অঘোরীবাবা তাঁর কল্যাণী ও নৈহাটির রামঘাট আশ্রম এ বসে মাতৃসাধক শ্রী বিপুল কুমার গঙ্গোপাধ্যায় কে বলেছিলেন। ইং ১৯৮৫ সালে ১১২ বছর বয়সে মহাত্মা অঘোরীবাবা ব্রহ্মলীন হন। দেহ নশ্বর কিন্তু আত্মা অবিনশ্বর। .....কাল হতে কালান্তরে তা থাকবে চির সমুজ্জ্বল। মহাত্মা অঘোরী বাবা - ২

No comments:

Post a Comment