Saturday 12 November 2016

মহাত্মা অঘোরী বাবা 1

বাংলা ১৩১৮ সনের আষাঢ় মাসের মধ্য ভাগে একদিন মহাতীর্থ বক্রেশ্বর থেকে ৩৯ বছর বয়স্ক সিদ্ধ সাধক মহাত্মা অঘোরী বাবা মহাপীঠ তারাপীঠ এ এসে উপস্থিত হলেন। জগৎ জননী তারামা ও শিবকল্প মহাযোগী বামদেব কে দর্শন ও প্রণাম করে অঘোরী বাবা অত্যন্ত তৃপ্ত হলেন। সর্বজ্ঞ বামদেব এই দীর্ঘকায় তেজদৃপ্ত যোগ ও তন্ত্র সিদ্ধ পুরুষ মহাজ্ঞানী অঘোরীবাবাকে দেখে আশীর্বাদ করে বললেন "তুই ভালোই করলি , তোর ভালোই হবে"...
অঘোরী সম্প্রদায় এর সকলেই অঘোরী পদবি ধারী - গুরু শিষ্য পরম্পরায় তা চলে আসছে। অ -ঘোর অর্থে যার কোনো ঘোর বা বিকার নেই। অর্থাৎ লজ্জা ঘৃণা ভয় মান কুল শীল ক্ষুধা তৃষ্ণা প্রভৃতি অষ্ট পাশ বা ঘোর বা বিকার থেকে যিনি সম্পূর্ণ মুক্ত তিনিই অঘোরী। এই অঘোরী সম্প্রদায় বাংলার তন্ত্র সাধনার ক্ষেত্রে বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে  - বিশেষ করে শৈব ও শাক্ত উপাসক অঘোরীরা।

সিদ্ধ সাধক মহাত্মা অঘোরীবাবা শাক্তপন্থী অঘোরী। তাঁর ইষ্ট দেবী হলেন দশমহাবিদ্যার ষষ্ঠ মহাবিদ্যা দেবী ছিন্নমস্তা , তিনি বক্রেশ্বর এ গুরু অঘোরী বাবার আশ্রয় এ থেকে কঠোর সাধনা করে দেবী ছিন্নমস্তার দর্শন ও কৃপালাভ করে সর্বতোভাবে সিদ্ধিলাভ করেন। একই সাথে তিনি জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রেই তিনি চরম সোপানে আরোহন করেছেন। তাঁর পূর্বাশ্রমের নাম ডক্টর অমলেন্দু গোস্বামী। বাংলা ১২৭৯ (ইং ১৮৭২) অগ্রহায়ণ মাসে কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে নদীয়া জেলার বিখ্যাত নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর বংশে তাঁর জন্ম হয়। পরম বৈষ্ণব বংশে জন্মগ্রহণ করলেও বাল্যকাল থেকেই অমলেন্দুর মধ্যে বৈষ্ণব ভাবের পাশাপাশি শক্তি ও শৈব ভাব সমান ভাবে দেখা যায়।
অমলেন্দুর পিতা ছিলেন খ্যাতিমান ব্যারিস্টার , তিনি তাঁর কর্মজীবন করাচিতে অতিবাহিত করেন এবং প্রভূত অর্থের অধিকারী হন। তিনি তাঁর একমাত্র পুত্র অমলেন্দু গোস্বামীকে কৈশোরেই জার্মানিতে পাঠিয়ে দেন শিক্ষা লাভের জন্য ,ক্রমে যুবক অমলেন্দু জার্মানির হাইডেলবার্গ থেকে পি.এইচ.ডি, লাভ করেন।  anthropology তে ডক্টরেট হয়ে ফ্রান্স এর প্যারিস এ এসে অধ্যাপনা শুরু করতে করতে Sociology তে পি.এইচ.ডি, লাভ করেন।
তাঁর জীবনের একটি অতি বিস্ময়কর ব্যাপার হলো যে তাঁর জন্ম যেমন অগ্রহায়ণের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে তেমনি তাঁর দুবার ডক্টরেট, পরবর্তীতে দীক্ষা , সিদ্ধিলাভ এবং তিরোভাব সহ সকল প্রধান ঘটনাই এই কৃষ্ণা চতুর্দশীতে ঘটে। এরপর তিনি পিতার নির্দেশে লন্ডন এ ব্যারিস্টারি পড়তে যান এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভারতে ফিরে আসেন ও এলেহেবাদ highcourt এ ব্যারিস্টারি শুরু করেন। এখানে তাঁর সাথে গভীর বন্ধুত্ব হয় ব্যারিস্টার মতিলাল নেহেরুর সঙ্গে। কিছুকাল পর ৩৫ বছর বয়সে অমলেন্দু গোস্বামী ব্যারিস্টারি  ছেড়ে হায়দ্রাবাদ এর নিজামের সেক্রেটারী রূপে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন।
এইসময় তাঁর পিতার মৃত্যু হলো , মাতৃদেবী অনেক আগেই দেহত্যাগ করেছেন। পিতার মৃত্যুতে তাঁর জীবনে বিরাট পরবর্তন ঘটলো। মৃত্যুকালে তাঁর পিতা পুত্রের জন্য ২২লক্ষ্য টাকা রেখে যান। পিতার মৃত্যু তাঁকে জীবন সম্বন্ধে উদাসীন করে দিল। প্রকৃতির হাতের পুতুল হয়ে জন্ম মৃত্যু জ্বরা ব্যাধির দাসত্ব করতে করতে জীবন কাটানো তাঁর কাছে অসহ্য মনে হলো ফলে ৩৬ বছর বয়স্ক ডক্টর ও ব্যারিস্টার অমলেন্দু গোস্বামী মহামান্য নিজামের বহুমূল্য সম্মানিত সেক্রেটারীর পদ ত্যাগ করলেন। তারপর পিতৃদত্ত ২২লক্ষ্য টাকা আত্মীয় -স্বজন প্রিয়জনদের মধ্যে বিলিয়ে সকল যশ খ্যাতি প্রলোভন ত্যাগ করে একবস্ত্রে বেরিয়ে গেলেন। সত্যস্বরূপ ঈশ্বরের সন্ধানে এবং ঈশ্বরের মাধ্যম স্বরূপ সদগুরুর সন্ধানে অমলেন্দু গোস্বামী নানাস্থানে পরিভ্রমণ করতে লাগলেন। মহাত্মা অঘোরী বাবা  - ১

No comments:

Post a Comment