Monday 3 September 2018

ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির


১৫০১ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা ধন্যমানিক্য ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে তিনি বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন, পরে স্বপনাদৃষ্ট হয়ে বর্তমান বাংলা দেশের চট্টগ্রাম থেকে কস্টি পাথরে নির্মিত ত্রিপুরা সুন্দরী বিগ্রহ এনে এই মন্দিরে স্থাপণ করেন । উদয়পুরের ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরকে ধরা হয় একান্ন পীঠের এক পীঠ । পুরাণের কাহিনী অনুসারে সতীর অঙ্গ যেখানে যেখানে পড়েছিল, সেই জায়গায়ই পীঠস্থানে পরিণত হয়েছে । বিষ্ণুর জন্য নির্মিত মন্দিরে ত্রিপুরা সুন্দরী বা কালী বিগ্রহ স্থাপণ নিয়ে ধন্য মানিক্যের মধ্যে দ্বিধা দ্বন্দ থাকলেও পড়ে তা দূর হয়ে যায় দৈব বাণী শুনে । মন্দিরের শিলালিপি থেকে এই সব তথ্য জানা যায় ।শিলালিপিগুলি কালের নিয়মে নষ্ট হয়ে গেছে । 
ত্রিপুরা সুন্দরী বিগ্রহ উত্‍কৃষ্ট কস্টি পাথরে নির্মিত । বিগ্রহের উচ্চতা ১ মিটার ৫৭ সে.মি । প্রস্থ ৬৪ সে.মি দেবীমূর্তি একটি পাথরের বেদিতে স্থাপিত । দেবীর চার হাত । মুখমণ্ডল লম্বাটে, তুলনায় চোখ দুটি ছোট । নাক চ্যাপ্টা । শবাসনে শায়িত মহাদেবের বুকের উপর পা দুটি স্থাপন করে দেবী দন্ডায়মান । দেবীর মাথায় আছে মুকুট ও জটারাশি । বর্তমান বিগ্রহের অবশ্য অনেক কিছুই স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়না ।
ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দিরটি ত্রিপুরার নিজস্ব স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত । মূল দ্বার পশ্চিমমুখী । উত্তর দিকেও একটি দরজা আছে । মন্দিরের বাইরের পরিমাপ ২৪ ফুট x ২৪ ফুট । ভেতরের পরিমাপ ১৬ x ১৬ ফুট । দেয়াল ৮ ফুট পুরু । মন্দিরের উচ্চতা ৭৫ ফুট । চার কোনায় আছে চারটি প্রধান স্তম্ভ । উপরের গম্বুজ বৌদ্ধ রীতির অনুকরণে নির্মিত । এর উপরে সপ্ত কলসী, তার উপরে পিতলের ধ্বজ দন্ড । এই মন্দিরের গঠন শৈলীতে বিভিন্ন প্রদেশ ও ধর্মের মন্দিরের গঠনরীতির সংমিশ্রণ রয়েছে । এটাই ত্রিপুরার নিজস্ব গঠন রীতি ।
 
ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির বিভিন্ন সম্প্রদায় ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মিলনভূমি হিসাবে স্বীকৃত । মন্দিরের সৃষ্ঠ লগ্নে শৈব সাক্তের মিল ঘটেছে । মন্দির নির্মিত হয়েছিল বিষ্ণুর জন্য, প্রতিষ্ঠিত হলেন দেবী কালিকা । এখানে মায়ের সঙ্গে নারায়ণ শিলার পূজা হয় আজও । এই মন্দিরের প্রধান বৈশিষ্ট হল, এখানে আগত তীর্থ যাত্রী ও পর্যটকদের ধর্ম বা বর্ণ পরিচয় জানতে চাওয়া হয়না । যে কোনও ধর্মের বা বর্ণের মানুষ এখানে পুজো দিতে পারেন । উপজাতি জন গোষ্ঠীর প্রিয় দেবী ত্রিপুরা সুন্দরী ।
মন্দিরে প্রতি দিন পূজা হয় । অন্ন ভোগের ব্যবস্থা আছে । সন্ধায় আরতি হয় । পুরানু ঐতিহ্য অনুসারে দশমী তিথি ছাড়া প্রতিদিন পশুবলি হয় ।
ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির বর্তমানে রাজ্য সরকার দ্বারা চালিত হয় এবং রাজন্য ত্রিপুরার ভারতভুক্তির চুক্তির শর্তানুসারে গোমতী জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর 'সেবাইত' পদে অধিষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক ও কালেক্টর, গোমতী জেলা, সদস্য-সচিব এবং মন্দিরের পুরো ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছেন।
ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির এবং আশেপাশের এলাকার ভবিষ্যত উন্নয়েনর জন্য, ত্রিপুরা সরকার মাতা "ত্রিপুরা সুন্দরি মন্দির ট্রাস্ট" গঠন করেছে। এই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ত্রিপুরার মাননীয় মূখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।।

এক্তেশ্বর শিব মন্দির ও তাঁর ইতিহাস

♦️ 🕉️ এক্তেশ্বর পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার একটি পর্যটন কেন্দ্র। এটি পূর্বে একটি গ্রাম ছিল। বর্তমানে একতেশ্বর বাঁকুড়া শহরের শহরতলি অঞ্চল। এটি দ্বারকেশ্বর নদের তীরে অবস্থিত।
🔴 🕉️ অঞ্চলটির নাম স্থানীয় এক্তেশ্বর শিব মন্দিরের নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে। বিষ্ণুপুরের রাজারা এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরটি লালমাটিতে নির্মিত, তবে কয়েকটি অংশ বেলেপাথর ও ইঁটের দ্বারা নির্মিত। প্রতি বছর চৈত্র মাসে এখানে মহাসমারোহে চড়ক পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
🔴 🕉️এক্তেশ্বর শিব মন্দিরে শিবের একপদ মূর্তি নামে একটি বিশেষ রূপ পূজিত হয়। শিবের রুদ্র মূর্তির একটি অদ্ভুত উদ্ভাস এই একপদ রুপ। ভগবান শিবের এই একপদ রুপটি ভারতে অত্যন্ত বিরল। দেবতার এক পা আছে কিন্তু দুই হাত। মন্দিরের দেবতা একপদেশ্বর হলেও, বর্তমান মূর্তিটি তাঁর নয়। অতীতেও এখানে কখনো একপদেশ্বরের মূর্তি ছিল কিনা তা সঠিক জানা যায় না।
🔴🕉️ মন্দিরটির শক্ত কাঠামো এর বৈশিষ্ট্য, যা বাংলায় সচরাচর দেখা যায় না। মন্দিরটি বাংলা শৈলীতেও নির্মিত নয়। এর উপরের ভাগটি হয় ভেঙে পড়েছে, নয়তো এর নির্মাণ অসম্পূর্ণই থেকে গিয়েছিল।
🔴🕉️ একেশ্বরের নাম একতা - ঈশ্বর (ঐক্যের দেবতা ) থেকে উদ্ভূত হয়।
🔴 🕉️ পৌরাণিক কাহিনীতে, বিষ্ণুপুর ও সামন্তভূম রাজত্বের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য, প্রভু শিব সীমান্তে মধ্যস্থতা করেন। তিনি বিচারক হিসাবে দাঁড়িয়ে (সালিস) তাদের মধ্যে একতা তৈরি করেন । এই মন্দির পাথর দিয়ে নির্মিত হয়েছিল এবং এটির একটি বিশাল পিরামিডকার গঠন আছে এটির শীর্ষে একটি বিশাল আমলোক শিলা রয়েছে। এটি একটি প্রথাগত বাঁকুড়া শৈলী মধ্যে নির্মিত হয়। এই পবিত্র স্থানে ভগবান শিব এর একটি পা-আকৃতির লিংঙ্গ রয়েছে । এই মন্দিরের কাছাকাছি, দারকেশ্বরের নদী প্রবাহিত হয়। পবিত্র লিংঙ্গটি নদীর সাথে সংযুক্ত। কখনও কখনও নদীর জল মন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করে এবং লম্বা পা আকৃতির লিংঙ্গটিকে স্নান করিয়ে দিয়ে যায় ।।
🔴🕉️ এই মন্দিরের প্রবেশদ্বারটি হিন্দু দেবতাদের সঙ্গে সুন্দরভাবে সজ্জিত। এই ভারতীয় মন্দিরের ইতিহাসে বলা হয়েছে যে পুরাণ অনুসারে এই মন্দিরটি দ্বাপট যুগে পান্ডাব দের সময় নির্মিত হয়েছিল এবং এটি স্বর্গের স্থপতি দেব শিল্পী বিশ্বকর্মা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল।
🔴 🕉️পুরান অনুসারে আরেকটি পৌরাণিক কাহিনী আমাদেরকে বলে যে, প্রভু শিবের এই শিব লিংঙ্গটি দৈত্য গুরু শুক্রাচার্য নিয়ে এসেছিলেন যিনি দানবদের গুরু ছিলেন। এবং শুক্রাচার্য এই শিব লিংঙ্গে পূজা ও ধ্যান করে সনজিবনী মন্ত্র বিদ্যা লাভ করে ছিলেন।
[তথ্য সূত্র শ্রী শুভ্র ভট্টাচার্য]